মাথা ব্যাথা হলে কি করা উচিত এবং মাথা ব্যথার কারণ জানুন
প্রিয় পাঠক আপনারা অনেকেই হয়তো মাথা ব্যাথা হলে কি করা উচিত সেটা নিয়ে অনেক চিন্তিত অনেক মানুষ আছেন যারা বুঝতে পারেন না মাথা ব্যথা হলে কি করা উচিত। তাই মাথা ব্যথা হলে কি করা উচিত এবং মাথা ব্যথার কারণ সম্পর্কিত সকল ধরনের তথ্য জানতে আমাদের এই পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। আমাদের আজকের এই পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে আপনি মাথা ব্যথা হলে কি করা উচিত এবং মাথা ব্যথার কারণ সম্পর্কিত সকল ধরনের বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবেন।
মাথা ব্যাথা হলে কি করা উচিত
বর্তমান সময়ে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে মাথা ব্যথা একটি অন্য রকমের কারণ হয়ে
দাঁড়িয়েছে। মাথা ব্যথা হলে আপনারা কি করবেন সেটা নিয়ে যদি বেশি চিন্তা করেন।
তাহলে স্বাভাবিক ভাবেই মাথা ব্যথাটা পূর্বের তুলনায় আরো বেশি বৃদ্ধি পাবে।
সাধারণত বর্তমান সময়ে ডিহাইট্রেশন মাথাব্যথার অন্যতম প্রধান কারণ । অনেক সময়
আমাদের শরীরে স্বাভাবিক ঘুম না হওয়ার ফলে মাথাব্যথা তৈরি হয় এছাড়া অতিরিক্ত
তরল গ্রহণ করার জন্য তা হতে মাথা ব্যথা হতে পারে।
বিভিন্ন কারণে মানসিকভাবে চাপে থাকলে কিংবা খাবারের অনিয়ম হলেও এ ধরনের সমস্যা
দেখা দিতে পারে।তাই মাথা ব্যাথা হলে সর্বপ্রথম আপনার করণীয় কেন আপনার মাথাব্যথা
হয়েছে সেটা চিহ্নিত করা এবং সে সমস্যাটি সমাধান করার চেষ্টা করুন। যেমন আপনি
যদি অনেক মানসিক চাপে থাকেন তাহলে চেষ্টা করা নিজের মানসিক চাপটা কমানো অথবা
আপনার যদি ঘুম কম হওয়ার কারণে মাথাব্যথা হয় তাহলে চেষ্টা করা বেশি বেশি
ঘুমানোর। কখনোই রাতের খাবার না খেয়ে থাকা যাবে না বা সারাদিন শুয়ে বসে
কাটিয়ে দেয়া যাবে না।
তাৎক্ষণিক ভাবে মাথাব্যথা থেকে পরিত্রান পেতে বিভিন্ন ধরনের ব্যথার ওষুধ
খাওয়া যেতে পারে। তবে এই শর্ত অনুযায়ী ব্যাথা নাশক ওষুধের সঙ্গে পেপটিক
আনসার রোধী ওষুধ খাওয়া আবশ্যক। খুব প্রয়োজন ছাড়া এ ধরনের ব্যথার ওষুধ
কিংবা অন্যান্য ওষুধ থেকে বিরত থাকা উচিত এগুলো অনুসরণ করার পরেও যদি
অতিরিক্ত মাথা ব্যথা হওয়া শুরু করে এবং এটি দীর্ঘদিন যাবত হতেই থাকে। তবে
নিকটস্থ কোন ডাক্তারের পরামর্শ নেই এবং সে অনুযায়ী জীবনযাপন শুরু করুন।
মাথা ব্যথার কারণ
বর্তমান সময়ে মাথা ব্যথার একাধিক কারণ রয়েছে এরই মধ্যে অন্যতম মাথা ব্যথার
কারণ হলো স্বাভাবিকের তুলনায় কম ঘুমানো, সব সময় দুশ্চিন্তে থাকা,
মানসিকভাবে চাপে থাকা, খাদ্যাভাসের পরিবর্তন কিংবা সময় মত খাদ্য গ্রহণে
উদাসীনতা ইত্যাদি। এছাড়াও প্রচন্ড এক্সারসনে ব্রেইনে রক্তচাপ বেড়ে গিয়ে এ
ধরনের ব্যাথার উদ্ভাবন হয়।
মাথা ব্যথা সাধারণত দুই প্রকারের হয়ে থাকে একটি হল স্বাভাবিক মাথাব্যথা বা
প্রাইমারি হেডেক ওপর আরেকটি হলো সেকেন্ডারি হেডেক সাধারণত প্রাইমারি হেডেকের
মধ্যে সাধারণত যেসব কারণে মাথাব্যথা গুলো হয় সেসব কারণগুলো
অন্তর্ভুক্ত।অপরদিকে সেকেন্ডারি হেডেক রয়েছে স্ট্রোক, বিভিন্ন ধরনের মাথায়
আঘাত জনিত ব্যথা, মস্তিষ্কের টিউমারের জন্য ব্যথা, সাইনোসাইটিস ইত্যাদি।
আরো পড়ুনঃ
গরমে ঠোঁট ফাটার মূল কারণ এবং এর সমাধান
তাই প্রাইমারি হেডেক কমিয়ে নিয়ে আসার জন্য কিছু নিয়ম অনুসরণ করায় শ্রেয়।
কিন্তু সেকেন্ডারি হেডেকের ক্ষেত্রে আপনার উচিত ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া। অনেক
সময় আমরা সাধারণত যে পরিমাণে পানি পান করি সে পানি পান করার পরিমাণের ঘাটতির
ফলে মাথা ব্যথা দেখা দেয়। একটানা কোন কাজ বিরতিহীন ভাবে করার ফলেও এই সমস্যাটি
হতে পারে।
মাথা যন্ত্রণা কমানোর উপায়
মাথা যন্ত্রণা কমানোর জন্য বর্তমান সময়ে অনেক ধরনের ঊপায় রয়েছে । এর মধ্যে
অন্যতম উপায় হলো। দুই হাত দিয়ে যন্ত্রণা যুক্ত স্থান কিংবা ব্যথাযুক্ত
স্থানে মাসাজ করা । এর ফলে মাথা যন্ত্রণা পূর্বের তুলনায় অনেকাংশে কমে যাবে।
এছাড়াও আরো অনেক পন্থা রয়েছে যেমন বরফের টুকরা কিংবা বরফ একটি কাপড় কিংবা
তোয়ালেতে মুড়ে যন্ত্রণা যুক্ত স্থানগুলোতে তোয়ালে কিংবা কাপড়ে আচ্ছাদিত
বরফের টুকরা দ্বারা দ্বারা মেসেজ করার মাধ্যমে খুব সহজেই মাথার যন্ত্রণা কমে
যায়।
মাথা ব্যাথা হলে কি ওষুধ খাব
অল্প মাথা ব্যথা হলেই আমরা ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের ব্যাথা
নাশক ওষুধ ব্যবহার করে থাকি। সাধারণত মাথাব্যথা স্বল্প সময়ের জন্য ভালো হলেও
এই ওষুধগুলো আমাদের শরীরের অনেক ক্ষতি সাধন করে।। তাই অল্প মাথা ব্যথাতে ওষুধ
গ্রহণ না করার চেষ্টা করতে হবে। তারপরও অনর্গল ব্যথা হতে থাকলে আমাদের ওষুধ
গ্রহণ করা উচিত।
এর মধ্যে অন্যতম ওষুধ গুলো হলো বিভিন্ন ধরনের প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ গ্রহণ
করা। তবে খেয়াল রাখতে হবে যে প্যারাসিটামল জাতীয় বা ব্যথা নাশক ওষুধের
সঙ্গে অবশ্যই আলসার রোধই ওষুধ খেতে হবে। অল্প মাথা ব্যাথাতে ওষুধ গ্রহণ করা
যাবে না এবং অতিরিক্ত ওষুধ গ্রহণের ফলে অনেক সময় মাথা ব্যথা তীব্র হয়ে যেতে
পারে। তাই ওষুধ গ্রহণ করলেও তার পরিমাণ অনেক সীমিত হতে হবে ।
মাথা ব্যথা কমানোর ১০টি ঔষধের নাম
অল্প মাথা ব্যথা কিংবা তীব্র মাথাব্যথার জন্য অনেকে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ গ্রহণ
করে থাকেন। সাধারণত আপনারা অল্প মাথা ব্যথার জন্য নিম্নলিখিত ওষুধগুলো গ্রহণ
করতে পারেন। প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ-নাপা এক্সট্রা, ফেপ প্লাস,কেফো,এইস
প্লাস ইত্যাদি। এছাড়াও টলি ফেনামিক এসিড জাতীয় ওষুধগুলোর মধ্যে অন্যতম ওষুধ
হলো মাইগ্রেক্স, টলমিক, টাফনিল ইত্যাদি।
আরো পড়ুনঃহার্ট ভালো আছে কিনা যেভাবে বুঝবেন
ন্যাপ্রোক্সেন জাতীয় মাথাব্যথা কমানোর ওষুধ গুলোর মধ্যে অন্যতম ওষুধ হলো
নুপ্রাফেন, নাপ্রো, দিপ্রক্সেন ইত্যাদি। সাধারণত মাথাব্যথার ওষুধের জন্য
অন্যতম ওষুধ হল টাফনিল যেটা
একটি ২০ এমজি ট্যাবলেট। অতিরিক্ত তীব্র মাথাব্যথার জন্য আপনি টাফনিল নাপা
ইত্যাদি ট্যাবলেট গুলো খেতে পারেন তাহলে আপনার খুব দ্রুত উপশম হবে।
সর্দি ও মাথা ব্যাথার ঔষধ নাম
সাধারণত আমাদের সর্দি কিংবা মাথা ব্যথা হলে আমরা প্রথমে প্যারাসিটামল জাতীয়
বিভিন্ন ধরনের ওষুধ খায় পরবর্তীতে আমাদের সমস্যা যদি সমাধান না হয় বা
পূর্বের তুলনায় এ ধরনের সমস্যা আরো বৃদ্ধি পায় তবে আমরা ডাক্তারের পরামর্শ
নেই। কিন্তু আমাদের উচিত ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন ধরনের ওষুধ গ্রহণ না
করা। তবে সর্দি কিংবা মাথা ব্যথা বা জ্বরের ক্ষেত্রে প্যারাসিটামল জাতীয়
ওষুধ গ্রহণ করা যেতে পারে তবে খেয়াল রাখতে হবে।
প্রথমেই যেন আমরা এ ধরনের ওষুধ গ্রহণ না করি । অতিরিক্ত তীব্র মাথা ব্যথা বা
সর্দি তে আক্রান্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত ওষুধ গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকা উচিত।
তবে মাঝে মধ্যে এ ধরনের ওষুধ গ্রহণ করার ফলে সর্দি কিংবা মাথা ব্যাথার মত ছোট
ছোট রোগগুলো বড় রোগে রূপান্তর হওয়ার প্রবণতা কমে যায়। সেজন্য সবদিক খেয়াল
রেখে ওষুধ গ্রহণ কিংবা ওষুধ গ্রহণ থেকে বিরত থাকা উচিত।
মাথা ব্যাথার ঔষধের নাম বাংলাদেশ
বাংলাদেশে মাথা ব্যথার অনেক ওষুধের প্রচলন থাকার পরেও। মাথাব্যথা উপশমের জন্য
অন্যতম ওষুধ হলো টাফনিল । টাফনিল ২০ এম জি ট্যাবলেট। সাধারণত বাংলাদেশের
মানুষজন মাথা ব্যাথার ওষুধ হিসেবে টাফনিল নামক এই ট্যাবলেটটি গ্রহণ করে থাকে।
এছাড়াও বাংলাদেশের মানুষজন মাথা ব্যথার ঔষধ হিসেবে বিভিন্ন ধরনের
প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ গ্রহণ করে থাকে।
তীব্র মাথা ব্যাথার ঔষধ
তীব্র মাথাব্যথা কিংবা অতিরিক্ত মাথা যন্ত্রণার ক্ষেত্রে নাপা এক্সট্রা বা এই
জাতীয় প্যারাসিটামল গ্রহণ করা যেতে পারে এছাড়াও অনেকেই আছে যারা তীব্র
মাথাব্যথা কিংবা যন্ত্রণার ক্ষেত্রে টাফনীল নামক ওষুধ ব্যবহার করে যা অনেক
কার্যকর এবং অনেক ডাক্তার এ ধরনের ওষুধকে সাজেস্ট করেন। এছাড়াও মাইগ্রেক্স
নামক ওষুধটি খেলেও দ্রুত মাথা ব্যথা থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
সুতরাং আপনি তীব্র মাথা ব্যাথার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের প্যারাসিটামল জাতীয়
ঔষধ কিংবা টাফনিল অথবা মাইগ্রেক্স এজাতীয় ওষুধ গ্রহণ করতে পারেন।আপনার এসব
ঔষধ গ্রহণ করার পরবর্তী সময়ে যদি আপনার তীব্র মাথা ব্যথা না কমে তবে
সেক্ষেত্রে আপনি ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে। সে অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণ করতে
পারেন।
তীব্র মাথা ব্যাথার ঘরোয়া চিকিৎসা
মাথা ব্যথা কমিয়ে আনার ঘরোয়া অনেক চিকিৎসা রয়েছে এরই মধ্যে অন্যতম কয়েকটি
চিকিৎসা হলো যে কারণে মাথাব্যথাটি হচ্ছে সেই কারণটি বের করা। যেমন অনেকেরই
পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে কিংবা অতিরিক্ত মানসিক দুশ্চিন্তার অভাবে এ ধরনের
মাথাব্যথার উৎপত্তি হয় সে ক্ষেত্রে তার চেষ্টা করতে হবে। নিজের ঘুমের সময়
ঠিক করা এবং নিজের মানসিক দুশ্চিন্তাটি কমিয়ে নিয়ে আসা । নিজের খাদ্যাভাসে
পরিবর্তন আনার জরুরী প্রতিনিয়ত সুষম খাদ্য গ্রহণ করার ফলে মাথা ব্যাথার
সম্ভাবনা অনেক কমে যায়।
তীব্র মাথা ব্যথার অন্যতম ঘরোয়া চিকিৎসা পদ্ধতি হলো মাথার যেই স্থানে তীব্র
যন্ত্রণা বা ব্যথা করছে । সেই স্থানে দুই হাত দিয়ে মাসাজ করা। এছাড়াও আপনি
চাইলে চা কফি গ্রহণ করতে পারেন। চা কিংবা কফিতে উপস্থিত ক্যাফেইন আপনাদের সকল
ধরনের মাথা যন্ত্রণা কমিয়ে নিয়ে আসতে সাহায্য করবে। চা খেলে চেষ্টা করবেন
চায়ে আধা কিংবা লবঙ্গ বা মধু নিষে খাওয়ার। চায়ের এ ধরনের মিশ্রণের ফলে তা
আপনার মাথা যন্ত্রণা উপশমে অনেক বেশি ভূমিকা রাখবে।
মাথা ব্যথার দোয়া
আল্লাহ তা'আলা চাইলে আমাদের সব ধরনের রোগ বালাই নিমেষেই শরীর থেকে অপসারণ করে
দিতে পারেন। তাই বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা গ্রহণ কিংবা ওষুধ গ্রহণের পাশাপাশি
আমাদের দোয়া করা উচিত।যেন আল্লাহতালা আমাদের জীবন থেকে সব সময় সকল ধরনের
রোগ বালাই থেকে আমাদের দূরে রাখেন।
আরো পড়ুনঃখুসখুসে বিরক্তিকর কাশি যেভাবে ভালো করবেন
মাথা ব্যথার জন্য যে ব্যক্তির মাথা ব্যথা করছে সে ব্যক্তির মাথায় হাত দিয়ে
তিনবার এই দোয়াটি পড়ে ফু দেয়ার মাধ্যমে আল্লাহ তা'আলা চাইলে সেই ব্যক্তি
দ্রুত মাথা ব্যথা থেকে মুক্তি লাভ করবে। মাথা ব্যথার দোয়াটি হলো- লা
ইউসাদ্দাউনা আনহা ওয়া লা ইয়ুংযিফুন। ইনশাআল্লাহ এই দোয়াটি পড়ে মাথায় ফুক
দেয়ার মাধ্যমে দ্রুত মাথা ব্যথার উপশম হবে।
শেষ কিছু কথা
আশা করছি আপনি ব্লগ পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে মাথা ব্যাথা হলে কি করা
উচিত এবং মাথা ব্যথার কারণ সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য জানতে
পেরেছেন এবং এছাড়াও আপনি মাথা ব্যথা দূর করার অনেকগুলো অজানা উপায় জানতে
পেরেছেন। প্রতিনিয়ত এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ এবং অজানা তথ্য সবার আগে জানতে
আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন। গুগল নিউজ ফলো লিংক