বিজয় দিবস রচনা এবং বিজয় দিবস এর ইতিহাস জানুন
আপনারা হয়তো বিজয় দিবস সম্পর্কে এবং সুগঠিত বিজয় দিবসের রচনা খুজে থাকেন তবে
আজকের এই পোস্ট টি আপনাদের জন্য আজক্লের এই পোস্ট টিতে বিজয় দিবস রচনা একদম
ভালভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।এই বিজয় দিবস রচনা টি আপনি পরিক্ষার জন্য ব্যাবহার করতে
পারবেন।
বিজয় দিবস এর ইতিহাস সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এবং বিজয় দিবস রচনা ভালমতো জানতে
পোস্ট টি না টেনে শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন।
বিজয় দিবস রচনা
বর্তমানে বাংলাদেশে বিজয় দিবস প্রতি বছর রাষ্ট্রীয়ভাবে দেশের সর্বস্থানে পালন
করা হয়।বাংলাদেশে প্রতিবছর ১৬ ই ডিসেম্বর এই দিনটি পালন করা হয়। মূলত দীর্ঘ
নয় মাস নিজেদের স্বাধীনতার দাবিতে যুদ্ধ করার পরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীরা
এই দিনে আত্মসমর্পণ করেছিল এবং এই দিনে সকল বাঙালি জাতি বিজয় অর্জন করেছিল
সেজন্য প্রতি বছর খুব সম্মানের সহিত দিনটি পালন করে থাকেন প্রতিটি
বাঙালি।নিম্নে খুব সুন্দর ভাবে সাজিয়ে এবং গুছিয়ে বিজয় দিবস রচনা টি
উপস্থাপন করা হলো।
সূচনা
১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১ দিনটি ছিল বাঙালি জাতির ইতিহাসে এটি অবিস্মরণীয় দিন। একটি
বাঙালির বহু প্রতীক্ষিত একটি দিন এবং এই দিনটিতে বাঙালি জাতি মুক্তি লাভ করে।
এই দিনটিতে বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের অভ্যুদয়
ঘটে। দীর্ঘ নয় মাসে অনেক রক্তের পিচ্ছিল পথ মাড়িয়ে ।
পরবর্তীতে অনেক প্রাণের বিনিময়ে বাঙালি জাতি সেদিন অর্জন করে তাদের প্রিয়
স্বাধীনতা। মুক্তি কামি বাঙালি জাতির কাছে সেদিনটি ছিল অনেক প্রতীক্ষিত একটি
দিন। আজও বাঙালি জাতি তার অস্তিত্ব উপলব্ধি করতে গেলেই ফিরে যায় সেই ১৯৭১ সালের
১৬ই ডিসেম্বরে। তাই এই জাতীয় জীবনে বিজয় দিবসের রয়েছে সুগভীর তাৎপর্য।
বিজয় দিবসে প্রেক্ষাপট
১৯৪৭ সালের আগস্ট মাসে অবিভক্ত ভারতবর্ষে ভেঙে পাকিস্তান এবং ভারত নামক দুটি
স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। দ্বিজাতি তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে আমাদের
পূর্ব বাংলা পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়। সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণে পূর্ব বাংলার
মানুষ স্বাধীন দেশ পাকিস্তানের লাভ করলেও প্রকৃতপক্ষে তারা স্বাধীনতার ফল ভোগ
করতেই পারেনি।
বাংলার অখন্ডতাকে বাদ দিয়ে ধর্মভিত্তিক পাকিস্তান রাষ্ট্রের অংশীদার হয়ে তারা
যে মস্ত বড় ভুল করেছে, তা তারা খুব দ্রুত উপলব্ধি করতে পারে। পশ্চিম
পাকিস্তানিরা নিপুন ছলে শোষণ করতে যায় পূর্ব বাংলাকে। পরবর্তীতে পশ্চিম
পাকিস্তানিরা উর্দুকে চাপিয়ে দিতে চায় পূর্ব বাংলার রাষ্ট্রভাষা হিসেবে।
এর প্রতিবাদে ফেটে পড়ে ছাত্র-জনতা এবং তারা রাজপথে আন্দোলন শুরু করে এবং তারা
দাবি করে রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই। আন্দোলন শুরু হওয়ার একপর্যায়ে ১৯৫২ সালের
একুশে ফেব্রুয়ারিতে মিছিল করতে গিয়ে শহীদ হন সালাম, বরকত, রফিক, শফিক, জব্বার
সহ আরো নাম না জানা অনেকেই। এরপর আন্দোলনের গতি বৃদ্ধি পেতে থাকে।
ঐতিহাসিক ছয় দফা এবং ১১ দফা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সংঘটিত হয় ব্যাপক গণজাগরন।
ফলে ১৯৬৯ সালে সফল গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচার আইয়ুব খানের পতন ঘটে।
এরপর সামরিক আইনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসে ইয়াহিয়া খান। তীব্র আন্দোলনের ফলে ১৯৭০
সালে ঘোষণা করা হয় সাধারণ নির্বাচন।
নির্বাচনে বাঙালির অবিসংবাদি নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিজয় ঘটে।
সঙ্গত কারণেই রাষ্ট্র পরিচালনার ভার তাকে দেওয়ার কথা থাকলেও পরবর্তীতে শুরু হয়
ষড়যন্ত্রের নীল নকশা। ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ এ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী
অন্তর্কিত হামলা চালায় নিরীহ ঘুমন্ত বাঙালিদের ওপর। তারা নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ
চালায় পিলখানা , রাজারবাগ , ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা সহ দেশের বিভিন্ন
স্থানে।
মধ্যরাতের পর হানাদার বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
গ্রেফতারের পূর্বেই, অর্থাৎ ২৬ শে মার্চের প্রথম প্রহরে তিনি বাংলাদেশের
স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। তার স্বাক্ষরিত ঘোষণা তৎকালীন ইপিয়ার এর ট্রান্সমিটার এর
মাধ্যমে চট্টগ্রামে প্রেরণ করা হয়।
এরপর চট্টগ্রামের স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ২৬ ও ২৭ শে মার্চ
বঙ্গবন্ধুর নামে প্রচারিত হয় এই স্বাধীনতা ঘোষণাপত্র টি। সারা বাংলায় ছড়িয়ে
পড়ে স্বতঃস্ফূর্ত মুক্তির সংগ্রাম। দীর্ঘ নয় মাস রক্ত সংগ্রামের পর .১৯৭১
সালের ১৬ই ডিসেম্বর আসে সোনালী দিন। বাঙালি জাতি স্বাধীনতা লাভ করে অর্জন করে
একটি মানচিত্র এবং একটি পতাকা।
বিজয় দিবসের তাৎপর্য
যুদ্ধ জয়ের মধ্যে দিয়ে জাতি পতাকা পেয়েছে, ভূখণ্ড পেয়েছে বলেই জাতি সফল
হয়েছে ধরে নেয়া যায় না। বরং এ বিজয়ের মাঝে আছে সুদূর প্রসারী তাৎপর্য।
স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছিল বলেই জাতির মেধাবী সন্তানরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে
অসামান্য অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছে। নিজ ভাষা চর্চা, সংস্কৃত পালন করতে পারছে
বাঙালি জাতি।
বিশ্বে আজ বাংলাদেশ আর বাঙালি জাতি অচেনা নয়। সমৃদ্ধ করার কাজে এদেশের আছে
গৌরবময় অবদান। আজ বিজয়ের জনের ফলেই বাঙালিরা নিজেদের সংস্কৃতি পালন করার
পাশাপাশি আরও নিজেদের মাতৃভাষায় কথা বলতে পারছে। সব কিছুর পাশাপাশি বাঙালিরাও
স্বাধীনভাবে এগিয়ে চলছে প্রতিটি স্বাধীন মানুষের মতো।
বিজয় দিবস উদযাপন
বাঙালি জাতির এই আনন্দের দিনটি নানা রকম ভাবে উদযাপিত হয়ে থাকে। সেদিন
বাঙালীরা মিলিত হয় প্রাণের মেলায়। দেশের সকল সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ওরে
আমাদের লাল সবুজের পতাকা। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান , স্কুল, কলেজ, ও বিশ্ববিদ্যালয়
অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ ধরনের অনুষ্ঠান।
রাষ্ট্রীয় প্রচার মাধ্যম সরকারি এবং বেসরকারি সকল টিভি চ্যানেলগুলো গ্রহণ করে
বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ। সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয় বিশেষ ক্রোড় পত্র। বিদেশের
বাংলাদেশী দূতাবাসগুলোতে ওড়ে আমাদের জাতীয় পতাকা। দেশের সর্বস্তরের মানুষ গভীর
শ্রদ্ধা স্মরণ করে মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের। বিজয়ের আনন্দে মানুষ স্মরণ করে
এই দিনটিকে।
বিজয় দিবস এবং আমাদের প্রত্যাশা
স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশ আমরা যেমন চেয়েছিলাম তেমনটা এখনো পাইনি। স্বাধীনতা
অর্জনের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক মুক্তি পেলেও আমরা অর্থনৈতিক মুক্তি এখনো পাইনি।
জনজীবনে এখনো আসেনি নিরাপত্তার নিশ্চয়তা। দেশের বিপুলসংখ্যক শিক্ষিত বেকারের
কর্মসংস্থান এখনো অনিশ্চিত রয়েছে।
বরং স্বাধীনতার বিপরীতে আরো রয়েছে দুর্নীতির ভয়াল রূপ যা দেখে বিস্মিত না
হয়ে পারা যায় না। আসলেই দেশটাকে স্বাধীন করার জন্য এবং স্বাধীনতা তাকে অর্থবহ
করে তুলতে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন অর্থনৈতিক মুক্তি এবং সামাজিক নিরাপত্তা।
এগুলোর পাশাপাশি আরও প্রয়োজন সম্পদের সুষম এবং সঠিক বন্টন।
বিজয় দিবস এবং আমাদের প্রাপ্তি
অনেক না পাওয়ার মধ্যেও আমাদের প্রাপ্তি অনেক। স্বাধীন বাংলাদেশ এখন শিক্ষায়
যথেষ্ট এগিয়ে রয়েছে। দেশের বাইরে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা কৃতিত্বের স্বাক্ষর
রেখে চলেছে প্রতিনিয়ত। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে এর পাশাপাশি পল্লী
জনপদে বিদ্যুতায়ন এবং স্বাস্থ্য খাত সহ অনেক ক্ষেত্রেই উল্লেখযোগ্য উন্নতি
ঘটেছে।
ক্রীড়া ক্ষেত্রেও সুখ্যাতি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে
রপ্তানি কারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের পরিচিতি দিন দিন আরো বেশি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
রপ্তানি কারক জিনিস হিসেবে প্রতিনিয়ত তৈরি পোশাক,চামড়া, হিমাইত চিংড়ি
ইত্যাদি পর এবার জাহাজ রপ্তানিকারক দেশ হিসেবেও বাংলাদেশ পরিচিতি পাচ্ছে।
উপসংহার
এক সাগর রক্ত আর লক্ষ্য প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের সোনার বাংলাদেশ। একটি
নতুন দেশকে সোনার দেশ হিসেবে গড়ে তোলার দায়িত্ব সকল নাগরিকের।
বিজয় দিবস
স্বাধীনতাকামী পবিত্র চেতনার ধারক। সেই পবিত্র চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আমাদের
প্রতিনিয়ত এগিয়ে যেতে হবে।
শেষ কিছু কথা
আশা করি ব্লগ পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে আপনি বিজয় দিবস রচনা এবং বিজয় দিবস
সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।প্রতিনিয়ত এধরনের গুরুত্বপূর্ণ এবং অজানা
তথ্য সবার আগে পেতে গুগল নিউজে ফলো করে আমাদের সাথে থাকুন।গুগল নিউজ ফলো লিংক।